বাপজানের বায়োস্কোপ – মুভি রিভিউ
বাপজানের বায়োস্কোপ সিনেমাটির গল্পের কেন্দ্রবিন্দুতে আছে একটি বায়োস্কোপ।এই বায়োস্কোপ কে ঘিরেই আবর্তিত হয়েছে পুরো সিনেমার কাহিনী।পরিচালক সিনেমার নাম নির্বাচনে মুন্সিয়ানার ই পরিচয় দিয়েছেন। এই বায়োস্কোপ টির মালিক ছিলেন হাসেন মোল্লার বাবা। তিনি গ্রামে – বাজারে ঘুড়ে ঘুড়ে বায়োস্কোপ খেলা দেখাতেন। একদিন হাসেন মোল্লা জমিতে কৃষিকাজ করছিলেন। একটু জিরিয়ে নেওয়ার জন্য ক্ষেতের পাশেই বসেছিলেন এমন সময় কল্পনায় দেখতে পান তার বাবা তাকে বলছেন সে যাতে বায়োস্কোপ টা আবার দেখানো শুরু করে। এরপর হাসেন মোল্লা সিদ্ধান্ত নেনে সপ্তাহে ২ দিন বায়োস্কোপ দেখাবেন আর বাকি দিনগুলো কৃষিকাজ করবেন। বায়োস্কোপ ঝেড়েমুছে পরিষ্কার করে হাসেন মোল্লা দেখতে পান আগের ছবির রিলগুলো নষ্ট হয়ে গেছে। হাসেন মোল্লা গ্রামের তরুণ ইসমাইল কে বলে তার জন্য কিছু ছবি এঁকে দিতে। যার বিনিময়ে তাকে পেটভরে মিষ্টি খাওয়াবে। এরপর নতুন গল্প আর চিত্র নিয়ে তৈরী হয় বায়স্কোপ।
হাসেন মোল্লা এক চড় থেকে ওন্য চড়ে, হাটে-বাজারে ঘুড়ে ঘুড়ে খেলা দেখাতে থাকেন। ভালোই চলছিল সব কিছু , এমন সময় একদিন চরের মহাজন জীবন সরকারের বউ বায়স্কোপ খেলা দেখতে চায়। বৌয়ের আবদার রাখতে জীবন সরকার ,হাসেন মোল্লাকে তার বাড়িতে নিয়ে যায়। এখান থেকেই মূল ঘটনার সূত্রপাত । জীবন সরকার বুঝতে পারে বায়স্কোপের গল্পটি তার মামার মুক্তিযুদ্ধকালীন অপরাধ গুলো নিয়ে তৈরী। জীবন সরকার চায় এই ঘটনাগুলোকে ধামাচাপা দিতে। এর জন্য জীবন সরকার ঘোষনা দেয় তার চরে এরপর থেকে আর কোনো বায়স্কোপ চলবে না। জীবন সরকার হুমকী প্রতিবন্ধকতা উপেক্ষা করে বায়োস্কোপ চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন হাসেন মোল্লা। বায়োস্কোপ এর জন্য নানা ঘাত প্রতিঘাত পাড়ি দিতে হয় হাসেন মোল্লাকে। এর ভুক্তভুগী হন চড়বাসীরাও। এভাবেই এগিয়ে গিয়েছি সিনেমার কাহিনী। সময় সুযোগ পেলে দেখে ফেলুন সিনেমাটি। নিরাশ হবেন না এটা বলতেই পারি…
সিনেমাকে সরাসরি মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক না করেও, গৌণভাবে মুক্তিযুদ্ধকে তুলে ধরে, এর তাৎপর্য কিভাবে দর্শকদের সামনে ফুটিয়ে তুলতে হয়, তার দৃষ্টান্তমূলক উদাহরণ এই মুভিটি।
গল্পের সিনেমাটোগ্রাফিটা ছিল নান্দনিক। চরের ওয়াইড এয়্যাঙ্গেল শটগুলো, সাসপেন্স ক্রিয়েট কররার জন্য ক্যামেরার যার্ক, শেষ মারামারির জন্য সাসপেন্স ক্রিয়েশন, প্রচণ্ড সাসপেন্স সহ একটা দৃশ্য দিয়ে শুরু হওয়া, গ্রামের মানুষের বায়স্কোপওয়ালার কাছে লবণ চাওয়া ইত্যাদি দৃশ্যগুলো ধারনে চিত্রগ্রাহক মেহেদি রনি মুন্সিয়ানার পরিচয় দিয়েছেন।মৌলিক গল্প আর অভিনয়ের শক্তি সিনেমাটিকে নিয়ে গিয়েছে এক অন্য উচ্চতায়। সিনেমাটিতে অভিনয় করেছেন বাংলাদেশের অন্যতম শক্তিমান অভিনেতা শহীদুজ্জামান সেলিম এবং শতাব্দী ওয়াদুদ। এছাড়াও সানজিদা তন্ময় ,মাসুদ মহিউদ্দিন সহ প্রমুখ অভিনেতা এই সিনেমাটিতে কাজ করেছেন। একধারে পরিচালনা ও চিত্রনাট্য লিখেছেন রিয়াজুল রিজু। শব্দ সংযোজন করেছেন সেতু চৌধুরী। ৪০ তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরষ্কারে সিনেমাটি শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র সহ আটটি বিভাগে পুরস্কার লাভ করে।