Close
সিনেমা

অনিল বাগচীর একদিন – মুভি রিভিউ

অনিল বাগচীর একদিন – মুভি রিভিউ

এই সিনেমাটি হুমায়ূন আহমেদ রচিত “অনিল বাগচীর একদিন” উপন্যাস অবলম্বনে ২০১৫ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত একটি বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র। এই উপন্যাসটির রচনাকাল ছিলো ১৯৯২। সেই বইমেলায় উপন্যাসটি এতোই জনপ্রিয় হয় যে বইমেলা চলাকালীন সময় ই বইটির দ্বিতীয় মুদ্রণ বের হয়েছিলো। ‘অনিল বাগচীর একদিন’ চলচ্চিত্রটি পরিচালনা করেছেন মোরশেদুল ইসলাম।

Anil Bagchir Ekdin(অনিল বাগচীর একদিন) - movie frame.

এই সিনেমার কেন্দ্রীয় চরিত্রটির নাম অনিল বাগচী যে স্বভাবে আজন্ম ভীতু প্রকৃতির। যাকে ভয় আচ্ছন্ন করে রাখে সারাক্ষণ – রাতে স্বপ্নেও হানা দেয় ছেলেবেলার তার ভয় পাওয়া স্মৃতিগুলো। প্রায় রাতেই দুঃস্বপ্নে ঘুম ভাঙ্গে তার। তার বাবার বলা শেক্সপিয়ার এর “বীর মরে একবার, কাপুরুষ মরে বার বার ” উক্তিটি বারবার মনে করেও নিজের মনের ভয় দূর করতে পারে না অনিল। অনিল কে জন্ম দিতে গিয়ে তার মা মারা যান। অনিলের পরিবারে শুধু আছে তার স্কুল শিক্ষক বাবা আর তার বোন। অনিল ঢাকায় একটি ইন্স্যুরেন্স কম্পানিতে চাকরি করার কারণে পরিবার থেকে দূরে থাকেন। ৭১ এর অগ্নিঝরা একটি দিনে অনিল একটি চিঠি পান – পাকবাহিনী তার বাবাকে হত্যা করেছে। বাবার মৃত্যু তার মনোজগতে পরিবর্তন ঘটায়। মৃত্যুভয় তুচ্ছ করে সে রওনা হয় টাঙ্গাইলের উদ্দেশ্যে নিজের বোনের দ্বায়িত্ব নেবে বলে। বাসের সহযাত্রী আইয়ূব আলী তাকে নিজের পরিবারের সদস্যের মতো আপন করে নেয়। জীবন বাঁচানোর জন্য মিথ্যে বলার অনুরোধ করে, কিন্তু অনিল পিতার দেয়া শিক্ষার অন্যথা হতে দিতে চায় না।  ভীতু অনিলের কাছে ও মৃত্যু ভয় হাস্যকর হয়ে উঠে। অনিলের মতো আজন্ম ভীতুকেও মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপট বুলেটের সামনে দাড়ানোর মতো বিরাট বিপ্লবী করে তোলে তার নিজের জায়গা থেকে।

এমন একটি গল্প নিয়েই এগিয়েছে সিনেমাটি। যুদ্ধের পটভুমি কিন্তু যুদ্ধ নাই বরং মানবিক গল্প, মূল্যবোধই সেখানে পেয়েছে প্রধান প্রাধান্য । পরিচালক  গল্পটির মূল চরিত্র অনিলের মতো একেবারেই সহজ সরল চিত্রবিন্যাসের মাধ্যমে গল্প বলার চেষ্টা করেছেন। হুমায়ূন আহমেদের উপন্যাসের চিত্রিক বয়ান করেছেন যেন। পরিচালক এ চলচিত্রে বাস্তবতাকে দেখিয়েছেন সাদা-কালো। আর কল্পনার  রং  দেখিয়েছেন রঙিন। যুদ্ধ চলার সময় মানুষের জীবণে কোন রঙ ছিলো না। সবসময় শুধু উৎকন্ঠা, নেই বেচে থাকার নিশ্চয়তা। শুধু একটাই স্বপ্ন ছিলো  ‘দেশ স্বাধীন হবে – মুক্ত দেশে বুক ভরে শ্বাস নিবে ’। তাই স্বপ্নকে পরিচালক দেখিয়েছেন রঙিন।

এই সিনেমাটি পরিচালকের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বানানো সিনেমা ‘আমার বন্ধু রাশেদ’ এর মতো ব্যবসা সফল না হলেও  জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রশংসিত হয়েছে । মোরশেদুল ইসলাম ছবিটির জন্য যৌথভাবে শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র এবং প্রথমবারের মত শ্রেষ্ঠ পরিচালক বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *