Close
ইতিহাস

নেফারতিতি কে ? মিশরীয় রানী নেফারতিতির অন্তর্ধান রহস্য

নেফারতিতি কে ? মিশরীয় রানী নেফারতিতির অন্তর্ধান রহস্য

” যাচ্ছ চলে নেফারতিতি – বিষন্ন চুল উড়ছে হাওয়ায়, সবুজ আকাশ দূরে সরে যায় – পথের এখনও কিছুটা বাকী…”

মেঘদলের গানে কে এই নেফারতিতি? তা না যানা গেলেও মিশরীয় ভাষায় ‘নেফারতিতি’ শব্দের অর্থই হচ্ছে ‘সবচেয়ে সুন্দর মানুষটি ধরণীতে এসে গেছে / সুন্দরীর আগমন’ ।

যাদের মিশরীয় সভ্যতা বা মিশরীয় পুরান সম্পর্কে আগ্রহ আছে তারা অবশ্যই যানেন নেফারতিতি ছিলেন প্রাচীণ মিশরের রাণী। মিশরের রাণী তো আর একজন ছিলেন না- এত রাণীর মধ্যে নেফারতিতি কেন বিখ্যাত ছিলেন? বিখ্যাত হওয়ার কারণ অনেকগুলা। তবে প্রধান কারণটা হচ্ছে নেফারতিতির দৈহিক সৌন্দর্য ও তার রহস্যাবৃত কর্মকান্ড ।

আমেনহোতেপের সাথে সাথে তার বিয়ের আগে নেফারতিতির জীবন সম্পর্কে খুব কম তথ্য যানা যায় । আমেনহোতেপ পরে নিজের নাম বদলে আখেনাতেন রাখেন ।

নেফারতিতির জন্ম হয় খ্রিস্টপূর্ব ১৩৭০ অব্দে। থেবসের এক রাজপ্রাসাদে বড় হওয়া এই রানীর পিতা ছিলেন ফারাও তৃতীয় আমেনহোতেপের উজির, অ্যাই। নেফারতিতি অ্যাইয়ের কন্যা, এই ব্যাপারে কোনো দ্বিমত না থাকলেও তার মায়ের পরিচয় নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। তখনকার শিলালিপিগুলোতে তার মায়ের নাম ‘তিয়ে’ লেখা থাকলেও প্রকৃতপক্ষে তিয়ে ছিলেন নেফারতিতির দুধ মা, আসল মা নন। উজির হিসেবে অ্যাই তার দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি কিশোর চতুর্থ আমেনহোতেপের দেখাশোনাও করতেন। শৈশবেই রাজকুমারের সাথে পরিচয় হয় নেফারতিতির। নেফারতিতি ও তার বোন মাদনোদজেম প্রতিদিনই থেবসের (মতান্তরে আর্মানার) সভায় হাজির হতেন। মাত্র এগারো বছর বয়সেই চতুর্থ আমেনহোতেপের সাথে প্রণয়ের সম্পর্কে লিপ্ত হন নেফারতিতি। পনের বছর বয়সে চতুর্থ আমেনহোতেপের সাথে বিয়ে হয় নেফারতিতির। ফারাও তৃতীয় আমেনহোতেপের মৃত্যুর পর স্বামীর সাথে সিংহাসনে আরোহণ করেন তিনিও।

Sculptures of Akhenaten and Nefertiti

© Mike Steele – Sculptures of Akhenaten and Nefertiti. Image Source: ancient-egypt-online

কথিত আছে, একক ভাবে আতেন’ বা ‘সূর্য চাকতি’ (সান ডিস্ক) বা সূর্য দেবতার প্রতি বিশ্বাস তার মধ্য দিয়েই মিশরে প্রবেশ করে। প্রাচীন মিশরে রাজনৈতিক ও ধর্মীয় নেতা হিসাবে শাসন করতেন ফারাওরা । তারা বহু ঈশ্বরবাদে বিশ্বাসী ছিলেন। ফারাও পরেই ক্ষমতাবান ছিল মন্দিরের পুরোহিতগণ। মূলত এদের দ্বারাই শাসিত হতো মিসর। তারা নানা দেবদেবীর উপাসনা করতেন। ফারাও আর পুরোহিতগণের মাধ্যমেই জনগণ ঈশ্বরের সাথে যোগাযোগ করতে পারত। এই বহু ঈশ্বরবাদে পরিবর্তন আসে নেফারতিতি-চতুর্থ আমেনহোতেপ এর সময়। তখন মিসরে নানা দেবদেবী এবং সবচেয়ে শক্তিশালী দেবতা আমুন-রা এর উপাসনা হতো। কারনাকের মন্দির ছিল প্রধান উপাসনালয়। আখেনআতেন তার শাসনামলে আমুন-রাকে দেবতা হিসেবে অস্বীকার করেন এবং অন্যসব দেবদেবীকেও নাকচ করে দেন। তিনি নিয়ে আসেন নতুন সৃষ্টিকর্তা আতেনের ধারণা। বলা হয়, স্বপ্নের মাধ্যমে সেই ধর্মের খোঁজ পান চতুর্থ আমেনহোতেপ। তার স্বপ্নে তিনি দেখতে পান একটি অস্তগামী সূর্য তাকে সন্তান হিসেবে ডাকছে। সেই সূর্য তাকে বলে যে সে চতুর্থ আমেনহোতেপকে ক্ষমতা দিয়েছে। তাকে উপাসনা করতে বলে এবং তার নামে মন্দির চালু করতে বলে। মিসরের এটাই প্রথম একেশ্বরবাদী চিন্তাধারা। যদিও প্রাচীন কিছু ছবি আর শিলালিপি থেকে স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয়, শৈশব থেকে আতেনের অনুরক্ত ছিলেন নেফারতিতি ও তার বোন। ধারণা করা হয় তার পরামর্শেই চতুর্থ আমেনহোতেপ নিজের নাম পরিবর্তন করে আখেনাতেন রাখেন। আখেনাতেন অর্থ আতেনের পুত্র। আখেনাতেন মিশরের বহুকাল ধরে চলে আসা ধর্মচর্চার সংস্কৃতি বাতিল করে দেন। বাকিদের মন্দিরে তালা লাগিয়ে আতেনকে এক ও অদ্বিতীয় দেবতা হিসেবে ঘোষণা দেন তিনি। এই সিদ্ধান্তকে একদিক থেকে দেখলে যেমন সেখানে একেশ্বরবাদ সৃষ্টির প্রথম ধাপ বলে মনে হবে, অপরদিকে দেবতা আমেনের পুরোহিতদের ক্ষমতা হ্রাস করার একটি রাজনৈতিক ইচ্ছা বললেও খুব একটা ভুল বলা হবে না।

Image of Akhenaten and Nefertiti praying "Aten"
আতেন দেবতার উপাসনা

আতেন এর উপাসনার ধরন একটু অন্যরকম ছিল। এই দেবতার উপাসনা দিনের আলোতে বাইরে সবার সামনে হতো। এর আগে আমুনরার পুরোহিতরা অন্ধকার মন্দিরগুলোর ভেতরে রহস্যময় কায়দায় করতেন। সাধারণ মানুষের সেই উপাসনার সঙ্গে তেমন যোগাযোগ থাকত না। নতুন দেবতা এবং নতুন উপাসনার ফলে সৃষ্টিকর্তা এবং জনগণের মাঝে শুধু একটি সত্তাই রয়ে গেল। তিনি হলেন ফারাও আখেনাতেন স্বয়ং। ফলে পুরোহিতদের গুরুত্ব চরমভাবে হ্রাস পেল। উপাসনার জন্য দেবতাকে উৎসর্গের জন্য পুরোহিতরা যে অর্থ জনগণ থেকে নিতেন, সেই পথ বন্ধ হয়ে গেল। শুধু তাই নয়, আখেনাতেন হুকুম দিলেন কার্নাকের মন্দিরের সব জৌলুস সরিয়ে দিতে। সাম্রাজ্যের নানা প্রান্তে তার আদেশে আমুন-রা এবং অন্যান্য দেবদেবীর মূর্তি সরিয়ে ফেলা হল। ৩০০০ বছরের পুরাতন ধর্ম ও দেবদেবীদের নিষিদ্ধ করেন। রাজধানী থেবসের সব মন্দির বন্ধ করে দেন এবং এর পুরোহিতদের জেলে পুরতে থাকেন। যেসব পুরোহিত এর বিরোধিতা করেছিল তাদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছিল এবং তাদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। থেকে গেল শুধু এক ঈশ্বর আতেন বা সূর্য। আর সেই সঙ্গে বাড়তে থাকল পুরোহিতদের ক্ষোভ। পরবর্তীতে নেফারতিতির বিরুদ্ধে তারা তাদের এই ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটায়।

Akhenaten,Nefertiti and their daughters in hieroglyphic
হায়ারোগ্লিফিকে আখেনআতেন, নেফারতিতি ও তার কন্যারা। Image from: Museum Berlin. Image source: New World Encyclopedia

তাদের বিয়ের কিছুদিন পরেই তাদের প্রথম কন্যা মেরিটাটেনের জন্ম হয়। তাদের দ্বিতীয় কন্যা, মেকেটাটেন, যিনি ১০ বছর বয়সে মারা গিয়েছিলেন, তিনিও থিবেসে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। রাজকীয় দম্পতির তৃতীয় কন্যা এবং তুতানখামুনের পরবর্তী স্ত্রী আঁখেসেনপাতেনও সেখানে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তার রাজত্বের মাত্র চতুর্থ বছরে চতুর্থ আমেনহোতেপ মধ্য মিশরে একটি নতুন রাজকীয় বাসভবন তৈরি করার সিদ্ধান্ত নেন আখেতাতেন, বর্তমান সময়ের আমর্না শহরের কাছে। সেখানে, নেফারতিতির সাথে, তিনি তার নতুন ধর্ম, আতেনের উপাসনা, সূর্যের চাকতি, এক এবং আতেনকে একমাত্র ঈশ্বর হিসাবে প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন। তার রাজত্বের সপ্তম বছরে রাজপরিবার আখেতাতেনে চলে যায়, যেখানে তাদের আরও তিনটি কন্যা ছিল, নেফারনেফেরুয়াতেন তাশেরিত, নেফারনেফেরুর এবং সেতেপেনরে। কোনো ছেলে ছিল না তাদের। আখেনাতেনের উপপত্নীদের গর্ভে জন্ম নেয় দুই পুত্র- তুতানখামুন আর স্মেনখকারে। এই ছয় মেয়ের মধ্যে আনখেসেনপাতেন পরবর্তীতে তুতানখামুনকে বিয়ে করে আনখেসেনামুন নাম গ্রহণ করে এবং ফারাওয়ের দায়িত্ব পালন করে।

স্বামী ফারাও আখেনাতেনের রাজত্বে অভূতপূর্ব ক্ষমতা উপভোগ করেন নেফারতিতি। তার শাসনামলের দ্বাদশ বর্ষে ফারাওয়ের সমান ক্ষমতা ও মর্যাদা দেওয়া হয় রানীকে। এই ক্ষমতা এর আগে কোন রাণীকে দেয়া হয়নি। মন্দিরের দেয়ালগুলোতে ফারাওয়ের ছবি যতটা জায়গা জুড়ে থাকতো, ঠিক ততটাই বড় করে থাকতো রানীর ছবি। কারনাকের মন্দিরের প্রবেশপথের পাশের দেওয়ালের পাথরের ধ্বংসাবশেষ থেকে প্রায় একশোর মত চিত্র পাওয়া গেছে। এইসব চিত্রে নেফারতিতিকে দেখা গেছে শাস্ত্রীয় আচার অনুষ্ঠানের মধ্যমণি হিসাবে। সাধারণত এইসব অনুষ্ঠানের ক্ষমতা ন্যস্ত থাকত ফারাওদের হাতে। সেইখান থেকেই ধারণা করা হয় যে নেফারতিতি দেবীর পর্যায়ে তাকে নিয়ে গিয়েছিলেন এমনকি তা ছিল ফারাওয়ের সমকক্ষ। একযুগের ও বেশী সময় ধরে নেফারতিতিই ছিলেন প্রাচীন মিশরের সবচেয়ে সুন্দরী আর ক্ষমতাশালী নারী।

Akhenaten and Nefertiti
ফারাওয়ের ছবি যতটা জায়গা জুড়ে থাকতো, ঠিক ততটাই বড় করে থাকতো রানীর ছবি ।  Image source: Brooklyn Museum

একটি খণ্ডিত পাথরের লিপি উদ্ধার হলে দেখা যায়, সেখানে নেফারতিতির নাম রয়েছে। যেখানে তার নামের পাশে উৎকীর্ণ রয়েছে “গ্রেট রয়্যাল ওয়াইফ” শব্দটি যা তার সামাজিক মর্যাদা প্রকাশ করছে। এমন বেশ কিছু পাথর চিত্রে দেখা যায় নেফারতিতি যুদ্ধরথে চড়ে একটি দণ্ড উঁচিয়ে আছেন । এ থেকে বিশেষজ্ঞরা ধারনা করছেন তিনি ছিলেন “সুপ্রিম অথরিটি অব দ্য স্টেট”। অন্য চিত্রে তাকে দেখা যায় তরবারি হাতে মিশরের শত্রুদের নিধনে ব্যস্ত।এছাড়াও রয়েছে সভ্রান্তদের মাঝে স্বর্ণপদক বিতরণের চিত্র। সব মিলিয়ে এসকল “ফ্রেসকো” থেকে যে ছবি পাওয়া যায় তা নেফারতিতিকে চিত্রিত করেছে সুন্দরীশ্রেষ্ঠা মিশর অধীশ্বরী হিসেবে।

শাসনামলের দ্বাদশ বর্ষে, আখেনাতেন ও নেফারতিতির কন্যা মেকেতাতেন মারা যায়। সে সময়ের একটি ছবিতে দেখা যায়, মৃত সন্তানের লাশের পাশে দাঁড়িয়ে কাঁদছে তার বাবা-মা। এই ঘটনার পরপরই ঐতিহাসিক সব রেকর্ড থেকে হারিয়ে যান নেফারতিতি। বীরদর্পে রাজত্ব করতে থাকা এক রানী বেমালুম গায়েব হয়ে গেলেন কীভাবে, তা আজও এক রহস্য। কেউ কেউ বলেন, মিশরে মহামারী আকার ধারণ করা প্লেগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান তিনি। ২০১২ সালের শুরুর দিকে, আমারনার ১০ কিলোমিটার উত্তরে একটি প্রাচীন খনির মধ্যে পাথরের মুখে খোদাই করা একটি শিলালিপি পাওয়া গিয়েছিল । এটিতে আখেনাতেনের রাজত্বের ১৬ তম বছরের তারিখ, এবং নেফারতিতির নাম এবং “গ্রেট রয়্যাল ওয়াইফ” হিসাবে তার অবস্থান উল্লেখ করা আছে । এই শিলালিপির উপর ভিত্তি করে এটি ধরে নেওয়া যায় যে তখনও নেফারতিতি ও তার স্বামী বেঁচে ছিলেন, যিনি তার রাজত্বের ১৭ তম বছরে মারা যান। আখেনাতেনের মৃত্যুর পর নেফারতিতির পরিণতি কী হয়, তার কোনো ঐতিহাসিক রেকর্ড নেই।

অনেকের মতে আখেনাতেনের মৃত্যুর পর নেফারতিতি স্বল্প সময়ের জন্য রাজত্ব করেছিলেন। এটাও ধারণা করা হয় যে আখেনাতেনের উত্তরসূরি হিসাবে নামকরণ করা ফারাও স্মেনখকারে প্রকৃতপক্ষে নেফারতিতি ছিলেন, যদিও শিলালিপিগুলি এটি নিশ্চিত করে না। আমারনার একটি ব্যক্তিগত সমাধিতে স্মেনখকারেকে তার মহান রাজকীয় স্ত্রী মেরিটাটেন, আখেনাতেন এবং নেফারতিতির জ্যেষ্ঠ কন্যার সাথে একত্রে চিত্রিত করা হয়েছে, যা এ ব্যাখ্যার বিরুদ্ধে কথা বলে।

অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের প্রাচীন মিশর শাখা নিয়ে কাজ করেন জ্যাকোবাস ভ্যান দিজক। তিনি বিশ্বাস করেন, জীবদ্দশায় স্বামীর সাথে সিংহাসন ভাগাভাগি করে নেন নেফারতিতি। পরবর্তীতে তার জায়গা দখল করে নেন তার বড় মেয়ে মেরিটাটেন। মেরিটাটেন আর আখেনাতেনের ঘরে বেশ কয়েকটি সন্তান জন্ম নেয়। সে সময় পিতা-কন্যার বিয়ের বিষয়টি মিশরীয় সমাজে খুব সাধারণ একটি ঘটনা ছিল। আবার কথিত আছে, ফারাও আখেনাতেনের মৃত্যু থেকে পুত্র তুতানখামুন সাবালক হওয়ার আগ পর্যন্ত সময়টুকুতে পুরুষের ছদ্মবেশ ধারণ করে রাজকার্য পরিচালনা করেন নেফারতিতি। ভিন্ন আরেকটি মতানুযায়ী, আখেনাতেনের মৃত্যুর পর দেবতা আমেন-রার পূজা আবারও জনপ্রিয় হয়ে ওঠে, বঞ্চিত পুরোহিতরা প্রতিশোধ নিতে রানী নেফারতিতিকে নির্বাসনে পাঠিয়ে দেন। কোনটি যে সত্য, তা নিয়ে রয়েছে অসংখ্য জল্পনা-কল্পনা। তবে রানী নেফারতিতির সমাধি খুঁজে পাওয়া যায়নি বলে গুজবগুলো যেন ডালপালা মেলে ছড়িয়ে পড়েছে খেয়াল খুশিমতো।

১৯৩৩ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে কিশোর তুতেনখামেন ফারাও পদে বহাল হলে তিনিই তার পিতা আখেনআতেন আর তার স্ত্রী নেফারতিতির গড়া সমস্ত সৌধ, মন্দির সহ যাবতীয় স্মৃতি ধ্বংস করে ফেলেন। তার সাম্রাজ্যের রাজধানী আমারনা থেকে পুরনো রাজধানী থিবস এ ফিরিয়ে নিয়ে আসেন। কারণ ও আছে। কারো কারো ধারনা, নতুন ধর্ম প্রচার কালে নেফারতিতি প্রাচীন ধর্মের মন্দিরগুলো ভাঙ্গার পাশাপাশি “কিয়া” নামের আখেনআতেন এর বোন এর গড়া স্তম্ভগুলোও ভেঙ্গে ফেলেন। আর তুতেনখামেন হলেন কিয়ার সন্তান। আর তাই নেফারতিতির মমিটি ফারাওদের সমাধিস্থলে পাওয়া যাবেনা হয়ত প্রতিহিংসার কারণেই। ঈজিপ্টোলজিস্ট এর ধারণা এই যে ,নেফারতিতির পিতা “আই” যিনি তুতেনখামেনের পরে ফারাও হয়েছিলেন তার নেপথ্য হাত ছিল তুতেনখামেনের রহস্যময় মৃত্যুতে। হয়তো আই তুতেনখামেনের বিরুদ্ধে প্রতিশোধের নেশায়ই এই কাজ করেছিল।

২০১৫ সালের আগস্ট মাসে তুতেনখামেনের সমাধির দেয়ালের স্ক্যান করা ছবি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে যেয়ে ব্রিটিশ প্রত্নতত্ত্ববিদ নিকোলাস রিভস দেয়ালের গায়ে গোপন দরজার নকশা দেখতে পান। পরে আরও সূক্ষ্মভাবে স্ক্যান করে দেখা যায় উক্ত দেয়ালের পাশে ফাঁকা জায়গা রয়েছে যা কোন আলাদা কক্ষ হতে পারে। ১৯২২ সালে তুতানখামুনের সমাধিস্থল আবিষ্কৃত হওয়ার পর সবচেয়ে বড় আবিষ্কার এটি ।নিকোলাস রিভস মনে করেন, সমাধির দেয়ালের অপর পাশেই নেফারতিতি সম্পূর্ণ অক্ষত অবস্থায় ঘুমিয়ে আছেন। রহস্য ঘনীভূত হয় নেফারতিতির খোঁজ দেওয়া সেই মূর্তি থেকেও। সেটির এক চোখ তখনো আকা হয়নি। কি এমন হয়েছিল যে সেটি শেষ করা হয়নি।

Queen Nefertiti one eye sculpture

এমনই অনেক প্রশ্নের জন্য নেফারতিতি এক রহস্য হয়ে আছে এখনো। প্রশ্নের উত্তরের জন্য গবেষণা চলছে মিশরের পিরামিড গুলোসহ সম্ভাব্য সব স্থানে। হয়তো রহস্য অনুসন্ধানকারীরা একদিন নেফারতিতির মমি খুঁজে পাবে। তার আগ পর্যন্ত নেফারতিতির অন্তর্ধান এক রহস্যই হয়ে থাকবে।


তথ্যসূত্র:
| Staatliche Museen zu Berlin
| Archaeology.org
| Ancient-origins
| Ancient Egypt Online
| New World Encyclopedia
| Itibritto | Somewhereinblog
| Brooklyn Museum




Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *